October 25, 2024, 6:28 am
দুর্নীতি রিপোর্ট ডেক্সঃ গত ০২ আগস্ট ২০২৩* তারিখ *বিকাল ০২.৩০ মিনিটে* ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির *অডিটোরিয়ামে* বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দের অংশগ্রহণে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন,২০০৯ অবহিতকরণ ও বাস্তবায়ন বিষয়ক একটি *সেমিনার* অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির *ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম,* মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব ) *জনাব এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান,* বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার *অধ্যাপক মোঃ রফিকুল ইসলাম* ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন *অধ্যাপক ড. এ ডব্লিউ এম আব্দুল হক* এবং সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক *জনাব মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।*
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকবৃন্দ,প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বৃন্দ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
আজকের সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জনাব মোঃ মাগফুর রহমান।
সেমিনারের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জনাব মাহমুদা আক্তার। তিনি স্বাগত বক্তব্যে সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রিত সকল অতিথির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
স্বাগত বক্তব্যের পরে অধিদপ্তরের কার্যক্রম সম্পর্কিত একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অত:পর সেমিনারটিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বিষয়ে ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জনাব আব্দুল জব্বার মন্ডল একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তিনি ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন,২০০৯ বিষয়ে উপস্থিত সকলকে বিস্তারিত বর্ণনা করেন।
মহাপরিচালক আলোচনার শুরুতেই এই সেমিনারের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বিষয়ে সচেতন করার বিষয়ে সহযোগিতা প্রদানের জন্য উপাচার্য মহোদয় ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।
আলোচনায় মহাপরিচালক বর্তমান সমাজে বিদ্যমান ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কাজের স্বরূপ তুলে ধরে তা প্রতিরোধে অধিদপ্তরের গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে সকলকে অবগত করেন। তিনি বলেন ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ সালে সংসদে পাস হয়। ২০১০ সাল থেকে অধিদপ্তরের কার্যক্রম শুরু হয়। আমরা ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। এ পথ পরিক্রমায় আমরা সকল ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করেছি। কিন্তু ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আমরা অনেকটা পিছিয়ে। বাজারে মেয়াদোত্তীর্ণ শিশু খাদ্য ও কসমেটিকস পাওয়া যাচ্ছে। সেবার ক্ষেত্রে ভোক্তাগণ প্রতারিত হচ্ছে। ঈদের সময় অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল গুলোতে বাচ্চাদের ইউনিফর্ম স্কুল থেকে কিনতে হয় যা অনেক সময় অত্যন্ত নিম্ন মানের হয়।তাছাড়া কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যান্টিনের খাবারের মানও অত্যন্ত খারাপ, দামও বেশি নেয়। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা এ সকল বিষয়গুলোতে সচেতন না হব আমরা প্রতারিত হব। এ সকল কারণে অধিদপ্তর পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া প্রত্যেক বিভাগ ও জেলায় কার্যক্রম চলমান আছে। অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও অধিদপ্তরের ইউটিউব চ্যানেলে অধিদপ্তরের অভিযানগুলো প্রচার করা হচ্ছে। অধিদপ্তরের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাবস্ক্রাইবার আছে। এসব ভিডিওগুলো গণমানুষের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আইন সম্পর্কিত বিভিন্ন লিফলেট ও প্যাম্পলেট বিতরণ করা হচ্ছে। সকল সুপারশপ গুলোতে আমাদের নিজস্ব প্রচারমূলক ভিডিওগুলো প্রচার করা হচ্ছে।শীঘ্রই অধিদপ্তরের একটি নিজস্ব আইপি টিভি চ্যানেল চালু হবে।
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রয় বন্ধে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। লোডশেডিং এর সময় ইলেকট্রিক পণ্যের ব্যবসায়ীগণ ইলেকট্রিক পণ্য সামগ্রীর দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছেন।পেট্রোল পাম্পে অনিয়ম বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। জনবলের সংকটের কারণে কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে । ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে নিজেদের অংশগ্রহণ ও সচেতনতা একান্ত কাম্য। কোন ভোক্তা প্রতারিত হলে লিখিতভাবে অভিযোগ করলে আরোপিত জরিমানার ২৫% পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ব্যবসায়ী কমিউনিটি, ক্যাব ও দোকান মালিক সমিতির সাথে সমন্বয় করে কাজ করে যাচ্ছে। ফেসবুক পেজ ও অনলাইনে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে ভোক্তাদেরকে সচেতন থাকতে হবে। ইতোমধ্য অধিদপ্তরে সিসিএমএস নামক সফটওয়্যার চালু করা হয়েছে যার মাধ্যমে ভোক্তগণ সহজেই অভিযোগ দায়ের করতে পারছেন । যেকোনো তথ্যর জন্য অধিদপ্তরের হট লাইন নম্বর ১৬১২১ এ ফোন করে ভোক্তাগণ তথ্য জানতে পারছেন।
স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে একটি ভেজাল মুক্ত ও ভোক্তাবান্ধব পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়ে তিনি বক্তব্য শেষ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার অধ্যাপক মোঃ রফিকুল ইসলাম নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণ করে স্বপ্নের দেশ গড়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন সবাই সচেতন হলে অধিদপ্তরে অভিযোগের পরিমাণ কমে যাবে। অধিদপ্তর যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তে একটি সেমিনার আয়োজন করায় আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। অধিদপ্তর যখন অভিযান পরিচালনা করেন, দোষীদের শাস্তি দেন তখন অত্যন্ত ভালো লাগে।
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ ডব্লিউ এম আব্দুল হক বলেন বাজারে ভেজাল পণ্যে সয়লাব হয়ে গেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে যা নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা- অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির
সম্মানিত ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডঃ সাইফুল ইসলাম বলেন আজকে আমরা সত্যিই আনন্দিত যে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এই বিশ্ববিদ্যালয় একটি সেমিনার আয়োজন করেছেন। জনাব আব্দুল জব্বার মন্ডল সহকারী পরিচালক ঢাকা জেলা কার্যালয় ও মহাপরিচালক মহোদয় অত্যন্ত চমৎকার বক্তব্য দিয়েছেন। অধিদপ্তর সুন্দরভাবে কাজ করে যাচ্ছেন যা নিয়ে আমরা গর্বিত। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সাথে যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি বলেন পূর্বে এত ভেজালের প্রচলন ছিল না, আজকের বাজার ভেজালে ভরপুর। তিনি পণ্যের মোড়কে লেবেল ব্যবহার করার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন।
সেমিনারের শেষ পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বিষয়ে কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয় ।
সভাপতির বক্তব্যে অধিদপ্তরের পরিচালক জনাব মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন , আমরা এখানে এসেছি তরুণদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে। ভোক্তা অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধ করতেই আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। নৈতিকতার সাথে যেন আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারি সেজন্য আমরা সদা সচেষ্ট আছি। তিনি সকলের সমন্বিত কাজ করার মাধ্যমে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সহজ হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে সেমিনারে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেমিনারের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।